পবিত্র কুরআনে আয়াত, বুরহান, বাইয়্যিনাত ইত্যাদি শব্দ মু'জিযা অর্থে ব্যবহৃত। যেমনঃ
❏ আপনি বনী ইসরাঈল কে জিজ্ঞেস করুন, আমি মুসাকে নয়টি প্রকাশ্য মু'জিযা দান করেছি। যখন তিনি তাদের কাছে আগমন করেন, তখন ফেরাউন তাঁকে বলল, হে মুসা! আমার ধারণায় তুমিতাে যাদু গ্রস্থ। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ১০১)
❏ অতঃপর আমি মুসা ও তাঁর ভাই হারুনকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদ (দলীল) সহ। (সূরা মু'মিনুন, আয়াত-৪৫৬)
❏ অতঃপর আমি মুসা ও তাঁর ভাই হারুনকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদ (দলীল) সহ। (সূরা মু’মিনুন, আয়াত-৪৫৬)
❏ ওদের কাছে রাসূল (আ.) গণ গিয়েছিলেন নিদর্শন তথা মু’জিযা সহকারে। অতঃপর কস্মিনকালেও এরা ঈমান আনায়নকারী ছিলনা, ইতিপূর্বেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তারা। (সূরা আল আ’রাফ, আয়াত নং ১০১)
❏ পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন তথা মু’জিযা অস্বীকার করার ফলেই আমাকে মু’জিযা সমূহ প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ৫৯)
❏ এভাবে হাদিস শরীফে নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন-
"আম্বিয়ায়ে কেরামগণের প্রত্যেককে (নবুয়তের) নিদর্শন স্বরূপ মু’জিযা দেওয়া গয়েছে, যা দ্বারা মানুষ ঈমান এনেছে। আর আমাকে মু’জিযা স্বরূপ যা দেওয়া হয়েছে তা হল ওহী।" 1
_____________________________
🔺১.(মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:১০৮০, হাদিস নং ৬৭৭৮)
মু’জিযা শব্দটি আরবী। এর আভিধানিক অর্থ পরাভূতকারী, অক্ষমকারী।
❏ সর্বজন স্বীকৃত আরবী অভিধান ‘আল মুনজাত’ গ্রন্থে মু’জিযার পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-
بمثله يأتوا ان عن البشر يعجز العادة خارق امر المعجزة
এমন অস্বাভাবিক কাজ করা বা প্রকাশ হওয়া যা করতে মানুষ অক্ষম। 2
_____________________________
🔺২.(আল মুনজাত, আরবী, বৈরূত, পৃ:৪৮৮)
❏ আল মু'জামুল ওয়াসীত অভিধানে আছে-
المعجزة امر خارق العادة يظهره االله على يدى نبى تأييدًا لنبوته وما يعجز البشران يأتوا بمثله
এমন অস্বাভাবিক কিছু কাজ যা আল্লাহ তায়ালা নবীর নবুয়তের সত্যায়নে নবীর হাতে (মাধ্যমে) প্রকাশ করেন। 3
_____________________________
🔺৩.(আল মু'জামুল ওয়াসীত, আরবী, পৃ:৫৮৫)
❏ মীর সৈয়্যদ শরীফ (رحمة الله) বলেন,
المعجزة امر خارق للعادة داعية الى الخير والسعادة مفرونة بدعو ا النبوة قصدبه اظهار صدق من ادعى انه رسول من االله
নবুয়তের দাবী সহকারে কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বানকারী অস্বাভাবিক ঘটনা সংঘটিত হওয়াকে মুজিযা বলা হয়। আর এর উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল (ﷺ) এর দাবীর সত্যতা প্রমাণ করা। 4
_____________________________
🔺৪. আলী ইবনে মুহাম্মদ জুরজানী (رحمة الله) (৮১৬হি.), কিতাবুত তারীফাত, আরবী, বৈরুত, লেবনান, পৃ:২১৯ ও মুফতি আমীমুল এহসান (رحمة الله) (১৯৭৪খৃ), কাওয়ায়েদুল ফিকহ, আরবী, পৃ:৪৯৪
❏ আল্লামা তাফতানী (رحمة الله) বলেন,-
وهى امر يظهر يخلاف العادة على يد مدعى النبوة عند تحدى المنكرين على وجه يعجز المنكرين عن الاتيان بمثله
মুজিযা বলা হয়, নবুয়ত অস্বীকার কারীদের সাথে চ্যালেঞ্জ করার সময় নবুয়ত প্রাপ্ত ব্যক্তি হতে এমন অলৌকিক কাজ সংঘটিত হওয়া যার মুকাবিলা করতে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় অক্ষম। 5
_____________________________
🔺৫. আল্লামা সা’দ উদ্দিন তাফতানী (رحمة الله) (৭৯১হি.), শরহুল আকায়েদ নসফিয়্যাহ, আরবী, পৃ:১৩৪
❏ ড. মুস্তফা মুরাদ বলেন,
المعجزة في اللغة مأخوذ من الاعجاز وحقيقة اثبات العجز في الغير ثم استعير لاظهار ثم اسند مجازا إلى ما هو سبب العجز وجعل اسماله ، وهو الأمر الخارق للعادة والتاء فيه للمبالغة والمعجزة اصطلاحا امر خارق للعادة يظهره الله على يدي مدعي النبوة في دار التكلف سالم من المعارضة يقصد بها تحدى المنکرین
মুজিযা শব্দটি الاعجاز থেকে নির্গত। এর উদ্দেশ্য হল অপরকে অক্ষম করা। অতঃপর রূপক অর্থে অক্ষমতা প্রকাশ ও এর কারণের জন্যে ব্যবহার হয় এবং রূপক অর্থেই এর নামকরণ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক কাজকে মু'জিযা বলা হয়। এখানে ও অক্ষরটি মুবালাগা তথা সর্বোচ্চ বা অতিমাত্রা অর্থে ব্যবহৃত। পরিভাষায়- এই পৃথিবীতে যে সব অস্বাভাবিক ঘটনা নবীর নবুয়তের প্রমাণ স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা নবী’র মাধ্যমে প্রকাশ করেন তাকে মু'জিযা বলা হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল বিরােদ্ধ বাদীদেরকে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অক্ষম করা। 6
_____________________________
🔺৬. ড. মুস্তফা মুরাদ, মু'জিযাতুল রাসূল (ﷺ) , আরবী, কায়রাে, মিশর, পৃ:১২
❏ ‘আন নিবাস' গ্রন্থে স্বভাববিরােধী কাজকে সাতভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,
اقسام الخوارق سبعة احدها المعجزة من الانبياء ثانيها الكرامة للاوليآء ثالثها المعونة لعوام
المؤمنين ممن ليس ناسقًا ولاوليا رابعها الارهاص للنبى قبل ان يبعث كشليم الاحجار على النبى صلى
االله عليه وسلم وادرجه بعضهم فى الكرامة وبعضهم فى المعجزة مجازًا خامسها الاستدراج للكافر
والفاسق المجاهر على وفق غرضه سمى لانه يوصل بالتديج الى النار سادسها الاهانة للكافر والفاسق
على خلاف غرضه كما ظهر عن مسيلمة اكذاب اذ تمضمض فى ماء فصارملحً ا –
ومس عين الاعور فصار عمى سابعها السحر لنفس شريرة تستعمل اعمالاً محصوصة باعانة
الشياطين
অর্থ: অলৌকিক বা স্বভাব বিরােধী কাজ হল সাত প্রকার। যথা: এক, মুজিযা যা আম্বিয়ায়ে কিরাম থেকে প্রকাশ পায়, দুইকারামাত যা আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে প্রকাশ পায়, তিন, মাউনাত যা সাধারণ মুমিন ব্যক্তি থেকে প্রকাশ পায় যারা ফাসিকও নয় আবার অলীও নয়, চার. ইরহাছ যা নবুয়ত প্রাপ্তি বা প্রকাশের পূর্বে নবীগণ থেকে প্রকাশ পায়। যেমন- পাথরে নবী কে সালাম করা নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে। তবে কেউ কেউ এই প্রকারকে কারামাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন আবার কেউ কেউ রূপকভাবে এটাকে মুজিযার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পাঁচ, ইসতিদরাজ যা কাফির ও প্রকাশ্য ফাসেক ব্যক্তি থেকে তার উদ্দেশ্য বা চাহিদা মােতাবেক প্রকাশ হয়। এটা ইসতিদরাজ করে নাম করণের কারণ হল এটি ধীরে ধীরে তার প্রকাশক কে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। ছয়. এহানত যা কাফির ও ফাসিক ভণ্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাব থেকে। সে যখন কোন পানিতে কুলি করত তা লবণাক্ত হয়ে যেত আর যখন কোন বাঁকা চোখ স্পর্শ করত তা কিছু বিশেষ আমল বা কাজ যা শয়তানের সাহায্যে সংঘটিত হয়। 7
_____________________________
🔺৭. মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ ফারহাদী (رحمة الله), আন নিবরাস, আরবী, পৃ:২৭২ ও মুহাম্মদ আমজাদ আলী (رحمة الله). (১৩৬৭হি.) বাহারে শরিয়ত, উর্দু, বেরেলী শরীফ, খণ্ড:১ম, পৃ:১৭ ও গােলাম রাসূল (ﷺ) সাঈদী, শরহে মুসলিম, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:৬ষ্ট, পৃ:৬৭৯।
0 মন্তব্যসমূহ